Press "Enter" to skip to content

মৃত্যু: জীবনের সমাপ্তি, না অসীম যাত্রার শুরু?

মৃত্যু: জীবনের সমাপ্তি

মৃত্যুতে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে, না দেহহীন আত্মার অসীম যাত্রা শুরু হয়, তা নিয়ে চিন্তাশীল মানুষের মধ্যে বিস্তর মতের বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আর এ বিষয়ে মত ও ভিন্নমতের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবন ও মৃত্যু কে দেখার জন্যে।

তবে একটি বিষয়ে সব চিন্তাবিদ একটু হলেও একমত পোষণ করেন তা হল, এই নশ্বর জীবন শেষ হলে মানুষ আর বাস্তব জগতে থাকে না। বেশীরভাগ চিন্তাশীল মানুষের মতে, মানুষের দেহের বিনাশ হলেও দেহাশ্রয়ী আত্মার ধ্বংস হয় না বরং তা নতুন করে অনন্ত যাত্রার পথে ধাবিত হয়।

এই অনন্ত জীবনযাত্রী রূপ মানুষের জীবন সত্যি কী না, বা সত্য হলেও সে জীবনে পুরস্কার ও শাস্তির বিধান আছে কী না , সেটা নিয়ে মানুষের চিন্তার মধ্যে যথেষ্ট অমিল লক্ষ্য করা যায়।

মৃত্যু বিশেষ করে মানুষের জীবন-মৃত্যু এবং পরের সীমাহীন জীবনের অনন্তযাত্রা নিয়ে মানুষ ভেবেছে সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই। মানুষ তার নশ্বর জীবন নিয়ে ভাবতে গিয়ে বা নিজের জীবন-মৃত্যুর অপার রহস্য জানতে গিয়ে, স্বভাবজাত কৌতূহল বা জানতে চাওয়ার আগ্রহ থেকে মানুষ এ বিষয়ে কৌতূহলী হয়েছে বারবার। জীবন-মৃত্যুর রহস্যকে ভেদ করতে গিয়ে, দেহ, আত্মা ও পরমাত্মাকে নিয়ে আলোচনা করে, তারা নতুন মত ও পথের সন্ধান দিয়েছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানান মত।

জীবন মানে প্রাণের উদ্ভব; নতুন করে প্রাণের সৃষ্টি। আর যেখানে প্রাণের উদ্ভব সেখানেই মৃত্যুর হাতছানি। কারণ জীবন-মৃত্যু পদ দুটি  সাপেক্ষ পদ। একটি ছাড়া আরেকটির অর্থহীন। যেখানে মৃত্যু নেই সেখানে প্রাণ সৃষ্টির কথা ভাবা অন্তত চিন্তার ক্ষেত্রে অসম্ভব।

মৃত্যু মানে দেহ বা জড়ের মৃত্যু। যে দেহকে আজ সমাহিত করা হল তা আর এই বাস্তব বা ইন্দ্রিয় লব্ধ জগতে ফিরে আসবে না। কিন্তু তার পরেও মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য বিচারের জন্য আরেকটি জীবনকে স্বীকার করতে হয় জীবন-মৃত্যুর পরের শূন্যতা পূরণের জন্যে।

তাছাড়া মৃত্যুতে একেবারেই জীবন প্রবাহের সমাপ্তি বা শেষ হলে ভাল-মন্দ ও পাপ-পুণ্যের কোন আলাদা অর্থ থাকে না। এ জগতে যেহেতু সকল ভাল কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তি পাওয়া যায় না সেহেতু ন্যায়বিচার আশা করে যে, ভাল কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তির জন্য পরজগত ও অসীম জীবন থাকা আবশ্যক। যেখানে জগতের ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হবে আর মন্দ কাজে জন্য দেওয়া হবে শাস্তি। আর এই বিচার বা মানুষের আচরণের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যায়ন যিনি করবেন তিনি হলেন ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা।

জীবন-মৃত্যু ও আত্মার শেষ বিচার নিয়ে ভাবতে গিয়ে মানুষ পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অনুভব করেছে গভীরভাবে। এ জগত তিনি তার ইচ্ছায় সৃষ্টি করেছেন এবং পরিচালনা করছেন। তিনি অনাদি, অনন্ত। তিনি এই বস্তুজগতের স্রষ্টা এবং সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক।

যদিও তিনি সব কিছুর নিয়ন্ত্রক তবুও তিনি কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন। তার থেকে বড় ধারণা যেহেতু বাস্তব বা ইন্দ্রিয় লব্ধ জগতে আর নেই সেহেতু কারো দ্বারা তিনি নিয়ন্ত্রিত বা সীমিত নন।

কার্ষ-কারণ নিয়ম অনুসারে, কারণের কারণ থাকে। কিন্তু যিনি সকল কারণের স্রষ্টা বা আদিকারণ তার কোন কারণ থাকে না।এখানে একথা খুব জোর দিয়ে বলা যায় যে, শুধু মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য বিচার করার স্বার্থে বা জীবন-মৃত্যুর পরের শূন্যতা পূরণের জন্য হলেও, সৃষ্টির আদি থেকে বেশীরভাগ মানুষ জগত-জীবন সৃষ্টির জন্য, কোন না কোনভাবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সহ আত্মার শেষ বিচারের কথা যেমন স্বীকার করেছে, তেমন স্বীকার করেছে আত্মার অনন্ত যাত্রার কথা।

যে আদিকারণ জগত ও জীবনের বাস্তব কারণগুলো প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলেছে, বা যে নিয়মগুলো এই জগত ও জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা এই ইন্দ্রিয়লব্ধ জগত থেকে উদ্ভূত না বাইর থেকে এসেছে, প্রশ্নটির সাথে জীবন-মৃত্যু, আত্মা-পরমাত্মা ও আত্মার অনন্ত প্রবাহের বিষয়টি জড়িত।

মৃত্যুতে জীবনের সবকিছুর একেবারেই শেষ, না নতুন করে যাত্রার শুরু- প্রশ্নটির মীমাংসা করা যায় যদি এ আদিকারণ গত বিষয়ে মনের সংশয় দূর করা যায়। যদি আদিকারণ কে স্বীকার করা হয়, আর তাকে অসীম হিসাবে বিশ্বাস করা হয়, তাহলে মুতুকে জীবনের একেবারে শেষ না বলে সসীম জীবন পেরিয়ে অসীম জীবনযাত্রার শুরু বলা যায়। আর কেউ যদি তা বিশ্বাস না করে, তাহলে মৃত্যুই জীবনের শেষ, যেখানে আর কিছুই নেই।

আরো পড়ুন:

মৃত্যু ভয় ও ধর্ম | Fear of death and religion

বিশ্বাসের বিরোধিতা ও ধর্মে-ধর্মে ব্যবধান

আইন, ধর্ম ও নৈতিকতা: প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

Be First to Comment

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

    10 − 4 =