Press "Enter" to skip to content

দর্শন ও দার্শনিক | Philosophy and philosopher

সকল জ্ঞানী মানুষ দার্শনিক কী না, -কথাটির সত্যতা নিয়ে বোধ হয় স্বয়ং জ্ঞানীদের মধ্যেই যথেষ্ট সংশয় থাকতে পারে। দর্শন শব্দের আক্ষরিক অর্থ যদি হয় ‘জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা বা অনুরাগ’, তাহলে প্রত্যেক জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিকে দার্শনিক বলা যায়।

তবে এখানে বলে নেওয়া ভাল যে, পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব। আর এই বুদ্ধি থাকার জন্য ‘জানা থেকে অজানাকে জানতে চাওয়ার প্রচেষ্টা’ ও এ বিষয়ে মানুষের কৌতূহল চিরন্তন। সে অর্থে কোন কৌতূহলী মানুষ যদি, জীবন ও জগতের অমীমাংসিত মৌলিক সমস্যা ও জিজ্ঞাসাগুলোর যুক্তিযুক্ত আলোচনার খাতিরে, জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হন বা ভালবাসা দেখান, তাহলে সেই ব্যক্তিকে আক্ষরিক অর্থে অবশ্যই দার্শনিক বলা যায়।

প্রতিটি মানুষ কম-বেশী ভাবুক বা চিন্তাশীল। আর মানুষ চিন্তাশীল বা চিন্তা করতে পারে বলেই প্রকৃতির লীলা খেলায় সংশয় ও বিস্ময় প্রকাশ করে। সে কৌতূহলী হয়ে জানতে চাই গোটা প্রকৃতিকে এবং প্রকৃতির মাঝে লুকায়িত চরম সত্যকে। এই সামগ্রিক সত্যকে জানার আগ্রহ বা প্রচেষ্টা হল দর্শন। আর এ সত্যকে জানার কাজে যিনি ব্যাপৃত থকেন তিনি দার্শনিক।

জগত ও জীবনকে জানতে এবং জগত ও জীবনের আড়ালের রহস্যকে উদঘাটন করতে দর্শন জ্ঞানের তত্ত্বগত অনুসন্ধান চালায়। অর্থাৎ, দর্শন হল জ্ঞানের তত্ত্বগত অনুসন্ধান যাকে সত্যের অনুসন্ধানও বলা যায়।

সুসংবদ্ধ দর্শন বলতে যা বোঝায় তার পথচলা শুরু হয়েছে সুপ্রাচীন কালে গ্রীক নগর রাষ্ট্র এথেন্সে। স্বাধীন ও যুক্তিযুক্ত জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী কিছু ব্যক্তি যখন গ্রীক নগর রাষ্ট্রের প্রচলিত পৌরাণিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুক্তিযুক্ত কথা বলতে শুরু করেন তখন তারা স্বাধীন ও যুক্তিযুক্ত চিন্তার ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীকে নতুন পথের সন্ধান দেন। এক্ষেত্রে যুগস্রষ্টা হিসাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জনক মহামতি সক্রেটিস এর অবদান অবিস্মরণীয়।

তিনি তৎকালীন পৌরাণিক বিশ্বাসকে মেনে না নিয়ে, স্বাধীন চিন্তার দ্বারা নতুন সত্যে উপনীত হন এবং তা যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচার করতে শুরু করেন। ফলে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সক্রেটিস নিজ হাতে ’হেমলক’ পানে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি তার স্বীয় জীবন দিয়ে নিজ উপলব্ধি জাত সত্যকে রক্ষা করে দর্শন তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথচলার শুভ সূচনা করেন।

যুক্তিযুক্ত সত্যের প্রতি তার আমৃত্যু আস্থা পরবর্তী জ্ঞানপিপাসুদের যুক্তি ও সত্যের পথ অনুসন্ধানে প্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি যে সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন তার প্রিয় শিষ্য প্লেটো সেগুলোকে প্রচার করেন। পরবর্তীতে প্লেটোর অন্যতম শিষ্য এরিস্টটলের হাতে পড়ে সেগুলি আরও বিকশিত হয়ে সমৃদ্ধ দর্শনের রূপ লাভ করে।

পরবর্তীকালে অসংখ্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের নতুন নতুন চিন্তা বা মতবাদ দর্শন প্রবাহে যুক্ত হয়ে মানুষের সত্যানুসন্ধানের অদম্য কৌতূহল পূরণে সচেষ্ট থেকেছে। কখনো-কখনো কোন দার্শনিক মত যেমন কোন রাষ্ট্র বা সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তেমন যুগের পরিবর্তনে অনেক প্রতিষ্ঠিত মতও, নতুন মতের কাছে হার মেনে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।

এভাবে জগত-জীবনের অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার অদম্য কৌতূহল পূরণে, দর্শন মানুষের চারপাশে থেকেছে এবং এখনো অসংখ্য চিন্তা ও মতবাদের বীজ প্রতিনিয়ত বপন করে চলেছে। এই চিন্তা প্রবাহ কোনদিন থামবে না। কারণ, মানুষের অজানাকে জানার স্বভাবজাত কৌতূহল কোন দিনই থামবার নয়। মানুষ সাধারণত কারণের কারণ খুঁজতে কৌতূহলী।

আরো পড়ুন:

সক্রেটিস: জীবন ও দর্শন

আল গাজ্জালী: জীবন ও দর্শন

কার্ল মার্ক্স: জীবন ও দর্শন

প্লেটো: জীবন ও দর্শন

ছবিসূত্র: উইকিপিডিয়া- The Death of Socrates

Be First to Comment

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

    2 × 5 =